বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ

সেবা - শান্তি - প্রগতি
জয় বাংলা - জয় বঙ্গবন্ধু

ঘোষনাপত্র

আবহমানকাল থেকে আসমুদ্রহিমাচলে সম্পদশালী বঙ্গীয় জনপদে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভাগ্যন্বেষী মানুষ এসেছে সম্পদের লোভে হাজার বছর ধরে। সেই বৈদিক যুগ থেকে মধ্য-এশিয়া হতে আগত যাযাবর আর্য, তারপর মধ্যযুগে কখনো আরব-আফগান কখনো পর্তুগীজ, ওলোন্দাজ, বৃটিশ এবং সর্বশেষ পাকিস্তানী। কখনো ঔপনিবেশিকতার নিগড়, কখনো ধর্মভিত্তিক দ্বিজাতিতত্ত্বের করাল আগ্রাসন। আমার সম্পদ দিয়ে ইউরোপে হয় শিল্প বিপ্লব, বিপরীতে পরাধীনতার শিকলে শৃঙ্খলিত হয় আমার পূর্ব পরম্পরা। ফলশ্রুতিতে ক্রমবিকাশমান সভ্যতার সমন্তরালে উল্টো প্রলম্বিত হয় পূর্বপুরুষের পরাধীনতা। আমার পরাধীনতা ঘোঁচাতে যুগে যুগে পূর্বপুরুষের রক্ত ঝড়েছে অনেক। অবশেষে এই ভাগ্যবিড়ম্বিত উর্ব্বর পলল ভূমিতে জন্ম নিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলার দুঃখী মানুষের অধিকারের সংগ্রামে ৪৬৮২ দিন কেটেছে যার কারাগারে।

বৃটিশ ভারতের ক্রান্তিলগ্নে তৎকালিন অপরিণামদর্শি রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও বৃটিশ কূটচালে অবৈজ্ঞানিক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিক্তিতে আমরা একটি খন্ডিত স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। মাত্র ৪ মাস পরেই বঙ্গবন্ধু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন এই উল্টো তত্ত্বের খন্ডিত স্বাধীনতা ধর্মের নামে আরেক শোষনের হাতিয়ার মাত্র। তাই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি তার নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে জন্ম হলো পূর্ব বাংলার প্রথম সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’। সম্বিৎ ফিরে পেল বাঙালি, জেগে উঠলো তার জাতীয়তাবাদী সত্ত্বা। পাকবাহিনী প্রথম আক্রমন করলো আমার মাতৃভাষার উপর, রুখে দাড়ালো ছাত্রলীগ, রুখে দাড়ায় ছাত্রসমাজ। সেই থেকে শুরু হলো বাঙালির নতুন লড়াই সংগ্রাম। এ লড়াই বাঙালি জাতীয়তাবাদের, এ লড়াই আত্মসম্মান ও আত্মনিয়ন্ত্রনের। মুসলিম লীগের অব্যাহত সাম্প্রদায়িক শোষণ ও দমননীতিতে বিপর্যস্ত পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার কেএমদাস লেনের রোজ গার্ডেনে সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, আবুল হাশিম প্রমুখের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের প্রধান রাজনৈতিক সংগঠন ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। প্রতিষ্ঠাকালীন সেই প্রথম কাউন্সিলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন জননেতা জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে একদল লড়াকু স্বেচ্ছাসেবক।

মাতৃভাষার অধিকারের দাবীতে আন্দোলনরত পূর্ববাংলার ছাত্রসমাজের উপর চরম আঘাত হানে পাকিস্তানের মুসলিম লীগ সরকার। পাকিস্তানী শোষকের অব্যাহত নিপীড়নে কারান্তরীন তরুণ জননেতা শেখ মুজিবুর রহমান কারাগার থেকেই প্রেরণা জোগায় মাতৃভাষার অধিকারে সংগ্রামরত ছাত্র আন্দোলনে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের রক্তস্নাত পথে উম্মেষ ঘটে বাঙালির জাতীয় চেতনা, বাঙালি খুঁজে পায় তার জাতিসত্তার আত্মপরিচয়ের দিশা। সেই মহাপুরুষের নির্দেশণা ও পরিকল্পনায় আত্মপরিচয় বিনির্মাণে শুরু হয় স্বাধিকার আন্দোলনের নতুন অভিযাত্রা। ভাষা আন্দোলনের বিজয়ের পটভূমিতে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে হক-ভাসানীর যুক্তফ্রন্টের কাছে নির্মম পরাজয় ঘটে স্বৈরাচারী মুসলিম লীগের। যুক্তফ্রন্টের এই ঐতিহাসিক বিজয়ের নেপথ্য কারিগর ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি যুক্তফ্রন্ট ঘোষিত ২১ দফা নিয়ে গোটা পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সকল সংসদীয় আসনের পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে যুক্তফ্রন্টের নৌকা মার্কার পক্ষে ব্যপক জনমত গড়ে তুলেন। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে গঠিত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জননেতা জিল্লুর রহমান সাহেবকে। নিরংকুশ বিজয় অর্জনের পরও পাকিস্তানী প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারণে দুই বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারলো না যুক্তফ্রন্টের সরকার। ইতিহাসের কানাগলিতে পথ হারায় পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থা। অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় চেপে বসে সামরিক স্বৈরাচার। তার পরের ইতিহাস শুধুই আন্দোলন-সংগ্রামের যার নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু, কখনও থাকেন নেপথ্যে কখনও আন্দোলনর অগ্রবর্তি ভূমিকায়। ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা, ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থান প্রতিটি কালজয়ী লড়াই গোটা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে মুক্তির সংগ্রামে । প্রতিটি আন্দোলনেই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ভ্যানগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করে সুচারুভাবে। অবশেষে এল সেই মুক্তির ঘোষণা, মহাপুরুষ ডাক দিলেন স্বাধীনতার। তার তর্জনীর নির্দেশে জেগে ওঠে সাড়ে সাতকোটি বাঙালি। দীর্ঘ ৯মাসের রক্তাত্ব সংগ্রাম, ৩০ লাখ শহীদ আর ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বনিমিয়ে আমরা পেলাম স্বাধীনতা। বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন আমাদের স্বাধীনতা। আবহমান পরাধীনতার শৃঙ্খলবেরি ভেঙ্গে আমরা হলাম স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ। বাঙালি জাতির মহান মুক্তিদাতা, স্বাধীন বাংলাদেশর স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবর রহমান হয়ে ওঠেন জনগণের বঙ্গবন্ধু তিনিই আমাদের বাঙালি জাতির জনক।

৯ মাস যুদ্ধে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের ধ্বংসস্তুপের মধ্যে দাঁড়িয়ে শূণ্যহাতে জাতির জনকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার আত্মনিয়োগ করে দেশ পুনর্গঠনে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আত্মমর্যাদাশীল স্বনির্ভর দেশ গড়তে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ, ঠিক তখনই স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা সদ্যস্বাধীন দেশে ঘটায় পৃথিবীর ইতিহাসের নির্মম, ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ড। ১৯৭৫ সালের মধ্য আগস্টে দিনের প্রথম সূর্য রশ্মি ধানমন্ডি লেকের পানিকে উজ্জ্বল করার আগেই জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করে, সদ্য জন্ম নেয়া বাংলাদেশ নামক ছোট্ট জাতি রাষ্ট্রটিকে অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল পরাজিত শত্রুরা দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রের ইন্ধনে। শুধু বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, সস্ত্রীক কামাল-জামাল বা অন্য নিকট আত্মীয়রাই নয়, ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল, ১১ বছরের শিশু আরিফ সেরনিয়াবাত এমনকি ৪ বছরের শিশু সুকান্ত আব্দুল্লাহ কাউকেই রেহাই দেয় নি ঘাতকরা। সেই থেকে শুরু হয়েছিল উল্টো রথের যাত্রা বাংলাদেশের। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলো কারা অভ্যান্তরে। সামরিক শাসনের বুটে পিষ্ট হলো অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। পৃথিবীর নিকৃষ্টতম আইন ইমডেন্টিটি অধ্যাদেশ করে হালাল করা হলো হত্যাকান্ডকে। পাপিষ্ট রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধীদের সাথে নিয়ে সামরিক জান্তা বসল সিংহাসনে। নিষিদ্ধ হলো বঙ্গবন্ধু, জয়বাংলা।

তারপর আবার সুদীর্ঘ একুশ বছরের সংগ্রাম। ইতোমধ্যে পৃথিবীময় উদ্বাস্তু জীবন শেষে ভয়কে জয় করে দেশমাতৃকাকে শ্বাপদমুক্ত করতে ১৯৮১ সালে নিজভূমে ফিরে আসেন বঙ্গকন্যা। সামরিক স্বৈরাচার আর তথাকথিত জাতীয়তাবাদের পান্ডাদের বিরুদ্ধে দেশময় প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুললো। ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুণঃ প্রতিষ্ঠায় জননেত্রী শেখ হাসিনা অনুভব করলেন একটি স্থায়ী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৪ সালে জন্ম নিল বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। দীর্ঘ ২১ বছরের ধারাবাহিক লড়াই সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিরংকুশ সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে এল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দিক হারা দেশকে নতুন দিশার সন্ধান দিলেন বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্র নায়ক, জননেত্রী শেখ হাসিনা। হারিয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে এনে আত্মমর্যাদাশীল জাতি গঠনে সকল ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়ে বীরদর্পে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। যোগ্য পিতার সফল উত্তরাধিকারের হাত ধরে উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রনায়কের নির্দেশিত দূরদর্শি পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০-২১’ আজ বাস্তবায়নের দারগোড়ায়, ‘রূপকল্প ৪০-৪১’ শুধু সময়ের বিষয়। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রমূলক ভোট ডাকাতির নির্বাচনে ৭১ ও ৭৫ এর পরাজিত শত্রুদের হাত ধরে ক্ষমতা দখল করে বিএনপি। সারা বাংলাদেশ পরিণত হয় মৌলবাদী জঙ্গিদের অভয় অরণ্যে। এক দিকে ‘হাওয়া ভবন’ এর সীমাহীন দুর্নীতি ও দুঃশাসন অন্যদিকে সংখ্যালঘু নির্যাতন, খুন ধর্ষণ আর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে বিপর্য়স্ত বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে একযোগে ৬৩ জেলার ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা করে। শেখ হাসিনা ও শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে হাওয়া ভবনের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ঘটে যায় আরেকটি আগস্ট ট্রাজেডি। শেখ হাসিনাসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও আহত অবস্থায় বেঁচে গেলেও আইভি রহমানসহ প্রাণ হারায় ২৪ জন নেতা কর্মী যার মধ্যে ছিল স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা….। তাছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বাহাউদ্দিন নাসিমসহ অসংখ্য নেতা-কর্মি আহত হয় গ্রেনেডের স্প্রিন্টারে। সেই নির্মম সময়ে আহত নেতা-কর্মিদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় পাশে দাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ। বিএনপি জামাতের লাগামহীন দুর্নীতি-সন্ত্রাসের প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে মাইনাস টু ফর্মূলা বাস্তবায়নের লক্ষে দেশে আসে ওয়ান ইলেভেন খ্যাত সেনা সমর্থিত তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক শাসন। গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রি শেখ হাসিনা গ্রেফতার হন। বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সৈনিক হিসেবে স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতা কর্মিরা সামরিক রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে। সকল চক্রান্ত নষ্ট করে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে দিনবদলের স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আবার ক্ষমতা আনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে।

শুরু হয় ‘দিন বদলের সনদ’ বাস্তবায়নের ঐতিহাসিক উন্নয়ন যাত্রা। এই উন্নয়ন যাত্রা বাঁধাগ্রস্থ করতে আবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় শত্রুরা, শুরু করে আগুন সন্ত্রাস। কিন্তু যত বাঁধাই আসুক না কেন দুর্বার গতিতে ছুটে চলা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামাতে পারে নি কোন অপশক্তি। বিলিয়ন ডলারের লবিষ্ট আর বিশ্ব মোড়লদের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭১ ও ৭৫ এর পরাজিত শত্রুদের দাড় করায় বিচারের মুখোমুখি। পাপমুক্ত বাংলাদেশ এগিয়ে চলে উন্নয়নের জোয়ারে। জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এমডিজি) এর প্রায় সকল সূচক নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অর্জন করে বাংলাদেশ। স্বপ্নদর্শি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দূরদর্শি পরিকল্পনায় ‘রূপকল্প ২০-২১’ বাস্তবায়নে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া, ২০৩০ সালে মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডিজি)’ অর্জন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ ও সর্বোপরি ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ তথা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের পথে আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের পানে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বাস করে যতদিন শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবেনা বাংলাদেশ।

কিন্তু এই অগ্রযাত্রার কন্টকময় দুর্গম পথে মোট ২১ বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গকন্যা, বাঙালির আশা-ভরসার শেষ আশ্রয় জননেত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার মত সর্বস্ব হারানো, ত্যাগী, পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ বিশ্বের ইতিহাসে ২য় কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রতি পদে পদে মৃত্যুর ঝুঁকি জেনেও তাকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নি। ১৫ আগষ্টের মত নির্মমতা আমরা ঠেকাতে পারি নি সত্য কিন্তু আর কোন সন্ত্রাস-ষড়যন্ত্র যেন প্রিয় নেত্রীর জীবনকে বিপন্ন করতে না পারে প্রাথমিকভাবে সেটাই উদ্দেশ্য বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের। এরপর থেকে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ভ্যানগার্ড হিসেবে সকল সভা-সমিতি-কর্মসূচিতে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকা পালন করে। দেশব্যাপি স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কর্মীদের নানান সফল কর্মসূচির কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ আজ একটি অনন্য সম্মানজনক ও কার্যকরী সংগঠনের স্বীকৃতি পেয়েছে। রাজনৈতিক শত্রুদের পাশাপাশি বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার প্রধান চ্যালেঞ্জ অশিক্ষা, দারিদ্র, মন্দা ও নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠির ঘরে ঘরে অন্তর্মূখি টেকসই উন্নয়নের সুফল পৌঁছে দিতে জনমূখি যত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়নে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করছে। একদা উত্তরবঙ্গের মরাকাটাল হেতু সৃষ্ট মঙ্গা আজ সুদূর অতীত। শেখ হাসিনার নির্দেশে উত্তর জনপদের সকল প্রান্তিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কর্মীরা মঙ্গার বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিল। সেই সময় বিরোধী দলে থাকা সত্বেও উত্তরের মঙ্গা পীড়িত প্রায় সকল জনপদে লঙ্গরখানা খুলেছিল আওয়ামী লীগ যার ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্বে ছিল স্বেচ্ছাসেবক লীগ। পরপর কয়েকটি বন্যায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কর্মীরা নিজ হাতে তৈরি রুটি ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রস্তুতকৃত কয়েক লাখ খাবার সেলাইন দেশের বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দিয়েছিল।

পৃথিবীর ইতিহাসে স্বেচ্ছাশ্রমভিক্তিক সবচেয়ে বড় ইভেন্ট ‘বিশ্ব এজতেমা’। সারা পৃথিবী থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ টঙ্গিতে আসে ৩ দিনের ইবাদত বন্দেগীর জন্য। লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের স্বেচ্ছাশ্রম ও স্বার্থহীন অনুদানে সফল হয় প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমা। বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ জন্ম থেকেই প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে নিয়মিতভাবে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে থাকে। মুজিব বর্ষ শুরুর প্রাক্কালে, একাবিংশের বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশীল উন্নত জাতি রাষ্ট্রে পরিণত করতে মাদার অব হিউম্যানিটি, দেশরত্ন, সফল রাষ্ট্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পিত ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ তথা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে সকল প্রকার সাংগঠনিক ও মানবিক কর্মসুচিতে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করবে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সকল স্তরের নেতা কর্মী। সেই সাথে দেশ মাতৃকার যেকোন প্রয়োজনে বাংলার মানুষের আশা ভরসার শেষ আশ্রয় জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘সেবা-শান্তি-প্রগতির বীজমন্ত্রে’ উদ্দিপ্ত হয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কর্মিরা জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকবে, এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

Scroll to Top