বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ

সেবা - শান্তি - প্রগতি
জয় বাংলা - জয় বঙ্গবন্ধু

করোনা সংকট মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ

বিশ্বব্যাপী মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। চীনের উহান প্রদেশ থেকে শুরু হওয়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ২০০টির বেশি দেশ, বাংলাদেশে ১০ আগস্ট পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২,৬০,৫০৭ জন এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১,৫০,৪৩৭ জন। মারা গিয়েছেন ৩,৪৩৮ জন। সারাদেশে এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাঃ

করোনা ভাইরাসের আক্রমনে সংকটাপন্ন মানুষকে দিক নির্দেশনা দিতে ২৩ মার্চ মন্ত্রীসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশটি নির্দেশনা দেন।

১. ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল (৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত)পর্যন্ত সাধারন ছুটি থাকবে। তবে কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল এবং জরুরি যেসব সেবা আছে তার জন্য এগুলো বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। করোনাভাইরাস বিস্তৃতি রোধের জন্য সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনসাধারণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ ক্রয় ও চিকিৎসা গ্রহণ ইত্যাদি) কোনোভাবেই ঘরের বাইরে না আসার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

২. এ সময়ে যদি কোনো অফিস-আদালতে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করতে হয় তাহলে তাদের অনলাইনে সম্পাদন করতে হবে। সরকারি অফিস সময়ের মধ্যে যারা প্রয়োজন মনে করবে তারাই শুধু অফিস খোলা রাখবে।

৩. গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকবে। জনসাধারণকে যথাসম্ভব গণপরিবহন পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যারা জরুরি প্রয়োজনে গণপরিবহন ব্যবহার করবে তাদের অবশ্যই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেই গণপরিবহন ব্যবহার করতে হবে। গাড়িচালক ও সহকারীদের অবশ্যই গ্লাভস এবং মাস্ক পরাসহ পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

৫. ২৪ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে সশস্ত্র বাহিনী জেলা প্রশাসনকে সহায়তায় নিয়োজিত থাকবে। দেশের ৬৪ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাদের স্ব স্ব জেলার প্রয়োজন অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীর জেলা কমান্ডারকে রিকুইজিশন দেবে।

৬. করোনাভাইরাসের কারণে নিম্নের কোনো ব্যক্তি যদি স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম হয় তাহলে সরকারের যে ঘরে ফেরার কর্মসূচি রয়েছে, সে কর্মসূচির মাধ্যমে তারা নিজ নিজ গ্রামে ফিরে গিয়ে আয় বৃদ্ধির সুযোগ পাবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকরা প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবেন।

৭. ভাসানচরে এক লাখ লোকের আবাসন ও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। এ সময় যদি দরিদ্র কোনো ব্যক্তি ভাসানচরে যেতে চান তাহলে তারা যেতে পারবেন। জেলা প্রশাসকদেরকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

৮. করোনাভাইরাসজনিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় অন্নসংস্থানের অসুবিধা নিরসনের জন্য জেলা প্রশাসকদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এ সহায়তা প্রদান করা হবে।

৯. প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৫০০ জন চিকিৎসকের তালিকা তৈরি ও তাদের প্রস্তুত রাখবে। যাতে করে তাদের করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রয়োজনে কাজে লাগানো যায়।

১০. সব ধরনের সামাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাগম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষ করে অসুস্থ জ্বর সর্দি কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মসজিদে না যাওয়ার জন্য বারবার নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও সম্প্রতি মিরপুরে একজন বৃদ্ধ অসুস্থ অবস্থায় মসজিদে যান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি পরে মৃত্যুবরণ করেন। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের প্রতি অসুস্থ অবস্থায় মসজিদে নামাজ আদায় করতে না যাওয়ার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ

স্বাস্থ্যসেবাঃ

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) শনাক্তের পরীক্ষা সহজ ও দ্রুত করতে পরীক্ষা কেন্দ্র বৃদ্ধির কাজ করছে সরকার। বর্তমানে দেশের ৬৮টি স্থানে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত ১২,৭৩,১৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় ১০ হাজার ৫০টিসহ সারা দেশে ১৪ হাজার ৫৬৫টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের কাফন, জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করার জন্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৬ সদস্যের একটি টিম গঠন করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এখন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন মোট ৪,৫২,৩৭৮ জন এবং ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩,৯৯,৬৩৮ জন। এখন বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮,৬৫৭ জন।

বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৫০০ ভেন্টিলেটর আছে। তার সাথে আরো ৭০০ ভেন্টিলেটর বসানোর কাজ চলছে। আমদানি করা হচ্ছে আরো ৩৫০ টি। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে আছে ৭০০ ভেন্টিলেটর। সরকারি হাসপাতালগুলোতে নতুন ১০০ আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) শয্যা স্থাপনের কাজ চলছে। সেই সাথে আরও ৩০০ শয্যার সরঞ্জাম আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

পাশাপাশি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এ হেল্পলাইন স্থাপন করা হয়েছে । এর নাম্বারগুলো হলো 16263 (Hotline), 333, 10655, 01944333222, 01401184551, 01401184554, 01401184555, 01401184556, 01401184559, 01401184560, 01401184563, 01401184568, 01927711784, 01927711785, 01937000011, 01937110011। এখন পর্যন্ত এখান থেকে সেবা নিয়েছেন ১,৮৫,২৪,৬৪৩ জন। হটলাইন সিস্টেমে চিকিৎসাসেবা ও তথ্য প্রদানে যুক্ত আছেন ৪ হাজার ৬০২ জন চিকিৎসা সেবা কর্মী। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় তথ্য এক জায়গায় পাওয়ার সুবিধার্থে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে যার ঠিকানা www.corona.gov.bd।

করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে ৩,৬২৫ জন চিকিৎসক, ১,৩১৪জন নার্স এবং ৫০০টি প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের। এছাড়া কোভিড ১৯ বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছেন ১০ হাজার ৮১২ জন চিকিৎসক। ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কোওর্ডিনেশন সেন্টারের সুত্রমতে ডাক্তার ও চিকিৎসা সেবাদানকারীদেরর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার পিপিই, গাউন, সু প্রটেক্টর, এপ্রন ইত্যাদি বিতরণ করছে।

পাশাপাশি, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের জন্য অ্যালকোহল, করোনা টেস্ট কিট, টেস্ট ইনস্ট্রুমেন্ট, জীবানুনাশক, মাস্ক, প্রটেকটিভ গিয়ারসহ মোট ১৭ ধরনের পণ্য আমদানিতে শুল্ক ও কর অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছে রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দু\’টি শর্ত থাকছে তা হলো- ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ পণ্য আমদানি করতে হবে এবং আমদানি করা পণ্য মানসম্মত কি না তা অধিদপ্তর কর্তৃক নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়াও, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে জনগণের সার্বিক অবস্থা জানতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গ্রাহকদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য পেতে সব মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর কাছে এসএমএস পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসএমএসের মাধ্যমে মোবাইল ফোনের গ্রাহকের শ্বাস কষ্ট, জ্বর বা কাশি থাকলে *৩৩৩২# নম্বরে ডায়াল করতে বলা হচ্ছে । কোনো গ্রাহক *৩৩৩২# নম্বরে কল করলে ৯০ সেকেন্ডের একটি আইভিআর ভয়েস পাবে যেখানে আবার তাকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হচ্ছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশ্নের উত্তরগুলো সরাসরি চলে যাচ্ছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআরের কাছে। পরে সেগুলো পর্যালোচনা করে কিছু গ্রাহকের কাছে আরো বিস্তারিত তথ্য জানাতে তাকে আইইডিসিআর থেকে ফোন করা হবে।

যেসকল পেশার ব্যক্তিবর্গ এই সংকট মোকাবেলায় নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে সামনে থেকে কাজ করছেন তাদের জন্য স্বাস্থ্যবীমার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোভিড ১৯ মোকাবিলায় যেসব চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন, তাদের সম্মানী দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে। এই বিষয়ে তালিকা তৈরী করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। দায়িত্বপালনকালে যদি কেউ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হন, তার চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা সরকার নেবে। মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করে চলা সব স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারীর জন্য বীমার ব্যবস্থা করা হবে। পদমর্যাদা অনুযায়ী ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবীমা করা হবে। মৃত্যুর ঝুঁকি আছে বা মৃত্যুবরণ করলে তাদের জন্য এই বীমা ৫ গুণ বৃদ্ধি করে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top